অনুবাদ: ড. সামিউল হক
হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা
تقبل الله منا ومنكم، وغفر لنا ولكم،
আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের সকলের এবাদত ও বন্দেগি কবুল করুক এবং সবাইকে ক্ষমা করুক।
عَنِ الرِّضَا عَنْ آبَائِهِ عَنْ عَلِيٍّ عليه السلام قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلی الله عليه وآله خَطَبَنَا ذَاتَ يَوْمٍ فَقَالَ:
ইমাম রেজা আ. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল স. রমজানের কোন একদিন খোৎবা দিয়ে বলেছেন:
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ قَدْ أَقْبَلَ إِلَيْكُمْ شَهْرُ اللَّهِ بِالْبَرَكَةِ وَ الرَّحْمَةِ وَ الْمَغْفِرَةِ شَهْرٌ هُوَ عِنْدَ اللَّهِ أَفْضَلُ الشُّهُورِ وَ أَيَّامُهُ أَفْضَلُ الْأَيَّامِ وَ لَيَالِيهِ أَفْضَلُ اللَّيَالِي وَ سَاعَاتُهُ أَفْضَلُ السَّاعَاتِ.
ওহে লোকসকল! আল্লাহর মাস তোমাদের সামনে রহমত, বরকত ও মাগফেরাত নিয়ে হাজির হয়েছে। যে মাসটি তাঁর কাছে সর্বোতকৃষ্ট মাস। যে মাসের দিনগুলো তাঁর কাছে সর্বোতকৃষ্ট দিন, রাতগুলো সর্বোতকৃষ্ট রাত এবং সময়গুলো সর্বোতকৃষ্ট সময়।
هُوَ شَهْرٌ دُعِيتُمْ فِيهِ إِلَى ضِيَافَةِ اللَّهِ وَ جُعِلْتُمْ فِيهِ مِنْ أَهْلِ كَرَامَةِ اللَّهِ أَنْفَاسُكُمْ فِيهِ تَسْبِيحٌ وَ نَوْمُكُمْ فِيهِ عِبَادَةٌ وَ عَمَلُكُمْ فِيهِ مَقْبُولٌ وَ دُعَاؤُكُمْ فِيهِ مُسْتَجَابٌ فَاسْأَلُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ بِنِيَّاتٍ صَادِقَةٍ وَ قُلُوبٍ طَاهِرَةٍ أَنْ يُوَفِّقَكُمْ لِصِيَامِهِ وَ تِلَاوَةِ كِتَابِهِ.
যে মাসে তোমাদেরকে তাঁর মেহমানিতে দাওয়াত করেছেন এবং তার মাধ্যমে তোমাদেরকে কেরামতি প্রদান করেছেন। যে মাসে তোমাদের নিঃশ্বাসকে যিকিরের মর্যাদা দিয়েছেন, তোমাদের ঘুমকে করেছেন এবাদত তোমাদের আমলকে করেছেন কবুল এবং তোমাদের দাওয়াতকে করেছন মকবুল। অতএব তোমাদের প্রতিপালকের কাছে সৎ নিয়তে, পবিত্র অন্তকরনে প্রার্থনা কর যাতে তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন।
পূর্বোক্ত অংশের পর:
فَإِنَّ الشَّقِيَّ مَنْ حُرِمَ غُفْرَانَ اللَّهِ فِي هَذَا الشَّهْرِ الْعَظِيمِ وَ اذْكُرُوا بِجُوعِكُمْ وَ عَطَشِكُمْ فِيهِ جُوعَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَ عَطَشَهُ وَ تَصَدَّقُوا عَلَى فُقَرَائِكُمْ وَ مَسَاكِينِكُمْ وَ وَقِّرُوا كِبَارَكُمْ وَارْحَمُواصِغَارَكُمْ وَ صِلُوا أَرْحَامَكُمْ.
যে ব্যক্তি এই মহান মাস পাবার পরেও আল্লাহর ক্ষমা পেলোনা তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই। এ মাসে খুদার্থ ও তৃষ্ণার্ত থেকে কেয়ামতের খুদার্থ ও তৃষ্ণার্ত অনুভব করার চেষ্টা করো। গরীব ও অভাবিদেরকে (ফকির-মিসকিন) সাহায্য ও সহযোগীতা করো। বড়দেরকে সম্মান করো, ছোটদেরকে স্নেহ করো এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখো।
وَ احْفَظُوا أَلْسِنَتَكُمْ وَ غُضُّوا عَمَّا لَا يَحِلُّ النَّظَرُ إِلَيْهِ أَبْصَارَكُمْ وَ عَمَّا لَا يَحِلُّ الِاسْتِمَاعُ إِلَيْهِ أَسْمَاعَكُمْ وَ تَحَنَّنُوا عَلَى أَيْتَامِ النَّاسِ يُتَحَنَّنْ عَلَى أَيْتَامِكُمْ وَ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ مِنْ ذُنُوبِكُمْ.
তোমার জিহ্বাকে হেফাজত করো, তোমার চোখ যা দেখতে চায় না তার প্রতি অন্ধ দৃষ্টি রাখো, যা তোমার কান শুনতে চায় না, তা এড়িয়ে চলো এবং অন্য এতিমদের প্রতি করুণা করো, যাতে পরবর্তিতে তোমাদের এতিমদের প্রতি করুণা করা হয়। আর পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে প্রত্যাবর্তন করো।
وَ ارْفَعُوا إِلَيْهِ أَيْدِيَكُمْ بِالدُّعَاءِ فِي أَوْقَاتِ صَلَاتِكُمْ. فَإِنَّهَا أَفْضَلُ السَّاعَاتِ يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَ جَلَّ فِيهَا بِالرَّحْمَةِ إِلَى عِبَادِهِ يُجِيبُهُمْ إِذَا نَاجَوْهُ وَ يُلَبِّيهِمْ إِذَا نَادَوْهُ وَ يُعْطِيهِمْ إِذَا سَأَلُوهُ وَ يَسْتَجِيبُ لَهُمْ إِذَا دَعَوْهُ.
নামাজের সময় দুহাত তুলে তাঁর কাছে দোয়া করো। কারণ এটা হলো সর্বোত্তম সময় যখন সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি প্রদান করেন। যখন তারা তাকে ডাকে তখন তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন, যখন দোয়া করে তখন তাদের দোয়া কবুল করেন, যখন তারা তাকে আকুতি করে কিছু চায় তখন তিনি তাদেরকে দান করেন এবং যখন তারা মুনাজাত করে তখন তিনি তাদের মুনাজাত কবুল করেন।
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ أَنْفُسَكُمْ مَرْهُونَةٌ بِأَعْمَالِكُمْ فَفُكُّوهَا بِاسْتِغْفَارِكُمْ وَ ظُهُورَكُمْ ثَقِيلَةٌ مِنْ أَوْزَارِكُمْ فَخَفِّفُوا عَنْهَا بِطُولِ سُجُودِكُمْ وَ اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ أَقْسَمَ بِعِزَّتِهِ أَنْ لَا يُعَذِّبَ الْمُصَلِّينَ وَ السَّاجِدِينَ وَ أَنْ لَا يُرَوِّعَهُمْ بِالنَّارِ يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ.
হে লোকসকল, তোমাদের আত্মা তোমাদের কর্মের উপর নির্ভরশীল, সুতরাং ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের মুক্তি দাও, এবং তোমাদের পিঠ তোমাদের বোঝা থেকে ভারী, তাই তোমাদের দীর্ঘ সেজদা দ্বারা তোমাদের পিঠকে হালকা করো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ তাঁর ইজ্জতের শপথ করেছেন যে তিনি নামাযী ও সেজদাকারীদেরকে শাস্তি দিবেন না এবং কেয়ামতের দিন তাদেরকে জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত করবেন না।
أَيُّهَا النَّاسُ مَنْ فَطَّرَ مِنْكُمْ صَائِماً مُؤْمِناً فِي هَذَا الشَّهْرِ كَانَ لَهُ بِذَلِكَ عِنْدَ اللَّهِ عِتْقُ نَسَمَةٍ وَ مَغْفِرَةٌ لِمَا مَضَى مِنْ ذُنُوبِهِ، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَيْسَ كُلُّنَا يَقْدِرُ عَلَى ذَلِكَ فَقَالَ ص اتَّقُوا النَّارَ وَ لَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ اتَّقُوا النَّارَ وَ لَوْ بِشَرْبَةٍ مِنْ مَاء.ٍ
হে লোকসকল, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদার ও মুমিন ব্যক্তিকে ইফতার করাবে, আল্লাহর কাছে তার জন্য রয়েছে একজন কৃতদাসকে মুক্ত করার সওয়াব এবং তার অতীতের সকল গুনাহের ক্ষমা। তখন উপস্থিত সাহাবিগণ বললো: ইয়া রাসূল আল্লাহ! আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনো আছে যে ইফতার করাতে অক্ষম। তিনি বললেন, 'আগুনকে ভয় কর এবং অর্ধেক খেজুর দিয়ে হলেও ইফতার করাও। আগুনকে ভয় কর, এমনকি পানি পান করিয়ে হলেও ইফতার করাও।'
أَيُّهَا النَّاسُ مَنْ حَسَّنَ مِنْكُمْ فِي هَذَا الشَّهْرِ خُلُقَهُ كَانَ لَهُ جَوَازاً عَلَى الصِّرَاطِ يَوْمَ تَزِلُّ فِيهِ الْأَقْدَامُ وَ مَنْ خَفَّفَ فِي هَذَا الشَّهْرِ عَمَّا مَلَكَتْ يَمِينُهُ خَفَّفَ اللَّهُ عَلَيْهِ حِسَابَهُ وَ مَنْ كَفَّ فِيهِ شَرَّهُ كَفَّ اللَّهُ عَنْهُ غَضَبَهُ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَ مَنْ أَكْرَمَ فِيهِ يَتِيماً أَكْرَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ يَلْقَاهُ.
হে লোকসকল, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে তার চরিত্রের উন্নতি ঘটাবে, পুলসিরাতে পা পিছলে যাওয়ার দিন তার পথ চলা হবে সহজ এবং যে ব্যক্তি এ মাসে তার সম্পদ (দান করে) কমিয়ে দেবে, আল্লাহ তার হিসাব হালকা করে দেবেন এবং যে তার অপকর্ম সংযম করবে, আল্লাহ তার থেকে ক্রোধ নিবারণ করবেন এবং যে ব্যক্তি এ মাসে কোন এতিমকে সম্মান করবে, আল্লাহ তার সাথে সাক্ষাতের দিন তাকে সম্মান করবেন।
وَ مَنْ وَصَلَ فِيهِ رَحِمَهُ وَصَلَهُ اللَّهُ بِرَحْمَتِهِ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَ مَنْ قَطَعَ فِيهِ رَحِمَهُ قَطَعَ اللَّهُ عَنْهُ رَحْمَتَهُ يَوْمَ يَلْقَاهُ وَ مَنْ تَطَوَّعَ فِيهِ بِصَلَاةٍ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بَرَاءَةً مِنَ النَّارِ وَ مَنْ أَدَّى فِيهِ فَرْضاً كَانَ لَهُ ثَوَابُ مَنْ أَدَّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الشُّهُورِ.
আর এ মাসে যে তার আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখবে, কেয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন তিনি তাকে তাঁর রহমত দান করবেন এবং যে তার আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে, কেয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন আল্লাহ তার থেকে রহমত ছিন্ন করবেন। যে ব্যক্তি এ মাসে নফল নামায পড়বে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ লিপিবদ্ধ করবেন এবং যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয সালাত আদায় করবে সে অন্য মাসে সত্তরটি ফরয সালাত আদায়কারীর সওয়াব পাবে।
وَ مَنْ أَكْثَرَ فِيهِ مِنَ الصَّلَاةِ عَلَيَّ ثَقَّلَ اللَّهُ مِيزَانَهُ يَوْمَ تَخِفُّ الْمَوَازِينُ وَ مَنْ تَلَا فِيهِ آيَةً مِنَ الْقُرْآنِ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ خَتَمَ الْقُرْآنَ فِي غَيْرِهِ مِنَ الشُّهُورِ.
আর যে ব্যক্তি এ মাসে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়বে, আল্লাহ তার পাল্লা ভারী করে দেবেন যেদিন পাল্লা হালকা হবার সম্ভাবনা থাকবে। আর যে এ মাসে কোরআনের একটি আয়াত তেলাওয়াত করবে তার জন্য অন্য মাসে কোরআন খতমের সওয়াব দেয়া হবে।
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ أَبْوَابَ الْجِنَانِ فِي هَذَا الشَّهْرِ مُفَتَّحَةٌ فَاسْأَلُوا رَبَّكُمْ أَنْ لَا يُغَلِّقَهَا عَنْكُمْ وَ أَبْوَابَ النِّيرَانِ مُغَلَّقَةٌ فَاسْأَلُوا رَبَّكُمْ أَنْ لَا يُفَتِّحَهَا عَلَيْكُمْ وَالشَّيَاطِينَ مَغْلُولَةٌ فَاسْأَلُوا رَبَّكُمْ أَنْ لَا يُسَلِّطَهَا عَلَيْكُمْ.
ওহে লোকসকল! এই মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খোলা আছে, তাই তোমার রবের কাছে প্রার্থনা কর যেন সেগুলি তোমার জন্য বন্ধ না করেন এবং এই মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ থাকে তাই তোমার রবের কাছে প্রার্থনা করো যেন তা তোমার জন্য খোলা না হয়। এই মাসে শয়তানদের শৃঙ্খলিত অবস্থায় রাখা হয় তাই তোমার রবের কাছে প্রার্থনা করো যেন তিনি তোমাদের উপর তাকে প্রভাবিত না করেন।
قَالَ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ عليه السلام فَقُمْتُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فِي هَذَا الشَّهْرِ؟ فَقَالَ يَا أَبَا الْحَسَنِ أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ فِي هَذَا الشَّهْرِ الْوَرَعُ عَنْ مَحَارِمِ اللَّهِ.
وسائل الشيعة ج : 10 ص : 314
আমিরুল মুমিনিন আলী আ. বললেন, তখন আমি দাড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, এ মাসে সবচেয়ে উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, হে আবাল হাসান, এ মাসে সর্বোত্তম আমল হচ্ছে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা থেকে বিরত থাকা।
(ওসায়েলুশ শিয়া ১০/৩১৪)